আজ সোমবার, ২২শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৭ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

ক্রেতা দর্শনার্থীদের ভিড়ে জমে উঠেছে মেলা

এম.এ মোমেন

ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার সাপ্তাহিক ছুটির ৬ষ্ঠ দিনে গতকাল ২১ জানুয়ারি শনিবার ক্রেতা দর্শনার্থীদের ভিড়ে জমে উঠেছে। মেলাপ্রাঙ্গণ হয়ে উঠেছে লোকে লোকারণ্য। আর পরিণত হয়েছে উৎসবের আমেজে। মেলার ২৭তম আসরের ২১তম দিনে সকাল থেকেই ক্রেতা দর্শনার্থীরা আসতে শুরু করে। স্টলে স্টলে ক্রেতাদের ভিড়। পণ্য বিক্রিও হচ্ছে প্রচুর। প্রত্যাশার তুলনায় শুক্রবার ও শনিবার বেশি লোক সমাগম হয়েছে। তবে নারীদের সংখ্যা বেশি। গত ২০ জানুয়ারি শুক্রবার ১ লক্ষ ৩০ হাজার টিকিট বিক্রি হয়েছে। ২১ জানুয়ারি শনিবার বিকাল ৫টা পর্যন্ত ৮০ হাজার টিকিট বিক্রি হয়।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, দীর্ঘ লাইনে টিকিট কেটে দর্শনার্থীরা মেলায় প্রবেশ করেন। মেলার শেষের দিক ও ছুটির দিন হওয়ায় ক্রেতা দর্শনার্থীদের ছিল উপচে পড়া ভিড়। মেলাপ্রাঙ্গণ ও আশপাশ ছিল লোকে লোকারণ্য। সকাল ১০টা থেকেই ক্রেতা দর্শনার্থীরা সারি সারি মেলায় প্রবেশ করছে। মাইকে ঘোষণা আসছে মায়েদের ও শিশুদের দিক বিবেচনা করে ধৈর্য্য সহকারে শান্তি, সু-শৃঙ্খলা ও সারিবদ্ধ ভাবে মেলায় প্রবেশ করতে হবে। অন্যথায় কর্তৃপক্ষ কঠোর আচরণ করবেন। এমন ঘোষণায় ক্রেতা দর্শনার্থীরা সু-শৃঙ্খল ভাবে মেলায় প্রবেশ করেন। পরে কেউ ছবি তোলেন। কেউবা স্টলে স্টলে ঘুরে বেড়ান তাদের পছন্দের পণ্যের খোঁজে। তিনতলা বিশিষ্ট প্রাণ কোম্পানির প্যাভিলিয়নে আকর্ষণীয় মূল্যছাড়ে পণ্য প্রদর্শন ও বিক্রি করা হচ্ছে। বেড়েছে বেচাকেনা।
মেলাপ্রাঙ্গন ঘুরেফিরে ও কেনাকাটা শেষে ক্লান্ত হয়ে অনেকেই মেলার প্রবেশ গেইটের পূর্ব পাশে বিশ্রাম নিতে দেখা গেছে। আইসক্রিমের স্টলে ভিড় লেগেই থাকে। গৃহস্থালি, ইমিটেশনের গয়না, ক্রোকারিজ ও প্রসাধনী সামগ্রীর স্টলে আরো বেশি ভিড়। ইলেক্ট্রনিক্স, গৃহস্থালি পণ্য, প্রসাধনী সামগ্রী, ইমিটেশনের গহনা, খেলনা, ফার্ণিচার, কারাপণ্য, আইসক্রিম, ক্রোকারিজ, থ্রি-পিস, শাড়ি, ওড়না, চাদর, নকশি কাঁথা, বেডশিট প্রচুর বিক্রি হচ্ছে। মেলাপ্রাঙ্গণ থেকে বের হওয়া সকলের হাতেই ক্রয় করা কোন না কোন পণ্য রয়েছে।
হোমট্যাক্স প্যাভিলিয়নের বিক্রয় প্রতিনিধি পাপিয়া সুলতানা বলেন, মেলার শেষের এ দশদিন ক্রেতা দর্শনার্থীদের আনাগোনা থাকবে বেশি। পণ্য বিক্রি হচ্ছে প্রচুর। ব্যবসায়ীরা লাভবান হচ্ছে। গুণগত মান ও সুলভ মূল্য পেয়ে ক্রেতারাও খুশি।
ডিজাইন বাই রুবিনার প্রোপাইটর ও উদ্যোক্তা রুবিনা আক্তার মুন্নি বলেন, গত কয়েকদিনের তুলনায় শুক্র ও শনিবার পণ্য বিক্রি হয়েছে বেশি। এভাবে চলতে থাকলে সকল ব্যবসায়ীরাই লাভবান হবেন।
জয়ীতার নির্বাহী পরিচালক আইরিন পারভীন বলেন, মেলার ২০তম ও ২১তম দিনে বিক্রি হয়েছে প্রচুর। দিনদিন ক্রেতা দর্শনার্থীদের ভিড় বাড়ছে।
নারীদের জামা কাপড় স্টলের মালিক ও দৌলতপুর দুঃস্থ মহিলা সমিতির সভাপতি রিজিয়া সুলতানা বলেন, বাণিজ্য মেলার শেষ ১০ দিনেই কেনাবেচা ভালো হয়। এবারের বাণিজ্য মেলা ব্যবসায়ীক ভাবেও সফল হবে।
মি.বাইট রেস্টুরেন্টের ব্যবস্থাপক আব্দুল আজিজ বলেন, ক্রেতা দর্শনার্থীদের আগমনে মেলাপ্রাঙ্গণ হয়ে উঠে লোকে লোকারণ্য। শুক্রবার দোকানের খাবারগুলো সন্ধ্যার আগেই শেষ হয়ে যায়। সেকারণে গতকাল শনিবার খাবারের আয়োজন ব্যাপক হারে করা হয়েছে।
আখতার ফার্ণিচারের বিক্রয় প্রতিনিধি জামাল উদ্দিন বলেন, এখন যাঁরা মেলায় আসছেন তাঁরা প্রত্যেকেই কিছু না কিছু কিনছেন। বাকি দিনগুলোতে আমরা আশাবাদী।
লাইবা রুটি মেকারের বিক্রয় প্রতিনিধি সানজিদা আক্তার বলেন, যানজট আর ধুলাবালু সহ বিভিন্ন প্রতিকুলতার কারণে এবার একব্যক্তি মেলায় একাধিকবার আসছেন না। আসলেও একেবারেই স্বল্প সংখ্যক মানুষ।
ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে আসা গৃহবধূ জান্নাতী আক্তার বলেন, এবারের মেলায তৃতীয়বারের মতো তিনি গতকাল এসেছেন। মূল্যছাড়ে প্রেশারকুকার ও ফ্রাইপেন তিনি ক্রয় করেছেন।
বাণিজ্য মেলায় গৃহস্থালি সামগ্রীর দোকানে পণ্য বিক্রি হয়েছে প্রচুর। এতদিন মেলায় ক্রেতার সংখ্যা কম থাকলেও এখন ধীরে ধীরে বাড়ছে। বিক্রি নিয়ে বিক্রেতারা আশাবাদী হয়ে ওঠেছেন। বিক্রেতাদের মুখে হাসি ফুটতে শুরু করেছে। স্টল ও প্যাভিলিয়নগুলোতে ক্রেতারা বেশি ভিড় করছেন।
ভারতীয় কাশ্মিরী শালের বিক্রয় প্রতিনিধি নরেশ পোদ্দার বলেন, ক্রোকারিজ সামগ্রীর পাশাপাশি মেয়েদের থ্রি-পিস, শাড়ি, ওড়না, চাদর, শীতের পোশাক, নকশি কাঁথা, বেডশিট সহ গৃহস্থালি পণ্য বিক্রি হয়েছে প্রচুর।
দিল্লী এলুমিনিয়ামের বিক্রয় প্রতিনিধি তপণ মজুমদার বলেন, ক্রেতারা অধিকাংশই একটু কমদামি পণ্য কিনতে চান। পণ্যের কেনা দাম ও কেউ কেউ বলেন না। যে দাম বলেন সে দামে পণ্য বিক্রি করা সম্ভব নয়।
টাঙ্গাইলের মধুপুর থেকে স্ব-পরিবারে আসা শিক্ষিকা ওম্মে কুলসুম বলেন, ঢাকা বাইপাস সড়কে দীর্ঘ যানজটে চরম ভোগান্তিতে মেলায় এসেছি। যানজটে মেলার আনন্দ ম্লান হয়ে গেছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর থেকে স্ব-পরিবারে আসা ব্যবসায়ী খালিকুজ্জামান বলেন, ভুলতা গাউছিয়া থেকে মেলাপ্রাঙ্গণ পনেরো মিনিটের রাস্তা। অথচ যানজটে দুই ঘণ্টা সময় লেগেছে।

রূপগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য রিটন প্রধান বলেন, সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্র ও শনিবার মেলায় আগত ক্রেতা-দর্শনার্থীদের নিরাপত্তায় তিন শতাধিক স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সচিব ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী বলেন, ক্রেতা দর্শনার্থীদের আগমনে প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে। সকাল থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মেলা চলে। সাপ্তাহিক বন্ধের দিন রাত ১০টা পর্যন্ত চলে। কুড়িল থেকে মেলা পর্যন্ত বিআরটিসি বাস আসা যাওয়া করছে।